আজকের এই লেখাটাও শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের জন্য। আপনারা অনেকেই হয়তো শুনেছেন BTRC - র ডেটাবেজে দেশের সকল মোবাইল ফোনের IMEI নম্বর সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে। ধারণা করা হচ্ছে একটা সময় পর নতুন কেনা মোবাইলগুলোর IMEI যদি BTRC'র ডেটাবেজে না পাওয়া যায় তাহলে সেগুলো আর মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকতে পারবে না। কাজেই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে Marks PC Solution এর পাঠকদের অবগত করার জন্যই আজকের এই পোস্ট।
স্বাভাবিক ভাবেই এদেশের যারা মোবাইল ফোন ডিলার রয়েছেন তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স দিয়ে মোবাইল আমদানি করে থাকেন। কিন্তু এরাই আবার বেশি লাভের আশায় কর ফাকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ মোবাইল সেট আমদানি করেন। এর ফলে ক্রেতারা হয়তো খুব সামান্যই ছাড় পায় ফোনের দামের দিক দিয়ে। কিন্তু কর ফাকি দিয়ে আমদানি করা এরকম অসংখ্য অবৈধ মোবাইল ফোন থেকে সরকারের প্রাপ্য হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব অনাদায়ী থেকে যায়।
আর এভাবে অবৈধ ফোন ক্রয় বিক্রয় হয় বলে আমাদের দেশে বিক্রিত ফোনের সঠিক পরিমাণও মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলোর জানা থাকে না। আর এর ফলে তারা বাংলাদেশের মার্কেটের গুরুত্বও সেভাবে বুঝে উঠতে পারে না।
উদাহরণ স্বরুপ স্যামসাং এর কথাই ধরুন। তারা হয়তো অফিসিয়ালি আমাদের দেশে বছরে 20 লক্ষ সেট বিক্রি করে। তাদের কাছে এর বেশি রেকর্ড নেই। আর আরো 20 লক্ষ সেট ডিলার রা অবৈধভাবে আমদানি করে বিক্রি করে। এখন স্যামসাং যদি বাংলাদেশের মার্কেট গবেষণা করে পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন সেট বাজারে ছাড়ে তখন তারা কিন্তু সেই 20 লক্ষ সেটের চাহিদা বিবেচনা করেই ফোনের দাম নির্ধারণ করবে। এবং আমাদের দেশের জন্য কোন ধরণের বৈশিষ্ট্য সম্বলিত সেট বাজারে আনবে সেটাও তারা ঠিক করবে চাহিদার অনুপাতেই।
কাজেই আপনার মার্কেট যেখানে ছোট সেখানে কিন্তু আপনি খুব বেশি চিন্তা ভাবনা করবেন না। Samsung এর মতই অন্যান্য কোম্পানী যারা আছে যেমন - Oppo, Vivo, Xiamo এদের বেলাতেও কিন্তু ব্যাপারটা একই রকম। ডিলার রা হয়তো India থেকে সেট আমদানি করবে কর ফাকি দিয়ে। আর সেগুলো Bangladesh এর বাজারে বিক্রি করবে বেশি লাভের আশায়। তাতে একদিকে যেমন আমাদের সরকারী রাজস্ব কমে যাবে অন্যদিকে ক্রেতারাও খুব বেশি লাভ করতে পারবে না। বরং ভবিষ্যতে ফোনের দাম, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদিতে আমরা পিছিয়ে থাকবো। কারণ ফোন কোম্পানীগুলো আমাদের দেশের ফোনের বাজারটি পুরোপুরি দেখতে পাবে না।
অনেক কথা হল এবার মূল আলোচনায় আসতে চাই। যেভাবে আপনি আপনার ফোনের বৈধতা যাচাই করতে পারেন সে বিষয়ে আসি। খুব সহজেই আপনি এই কাজটি করতে পারেন একটি মেসেজ পাঠিয়ে। এবং এর জন্য আপনাকে কোন চার্জ দিতে হবে না। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আপনি এই সেবাটি পাবেন। আর আপনার যদি দুটো সিম হয় সেক্ষেত্রে IMEI নম্বর ও হবে দুটি। আর সেক্ষেত্রে আপনাকে দুই বার মেসেজ পাঠাতে হবে আলাদা ভাবে।
SMS পাঠানোর পূর্বে আপনার ফোনের IMEI টি বের করে নিন *#06# চেপে। অথবা আপনি এটি পেতে পারেন ফোনের প্যাকেটে সংযুক্ত কোন স্টিকারে। অথবা ফোনের ব্যাক কাভার খুলে ব্যাটারির নীচ থেকে। যেসব সেটের ব্যাক কাভার রিমুভেবল না সেসব সেটের ব্যাক কাভারের উপরে বিক্রেতা IMEI স্টিকারটি লাগিয়ে দেয় অনেক সময়।
SMS এর মাধ্যমে ফোনের বৈধতা যাচাই -
- প্রথমেই আপনার ফোনের মেসেজ অপশনে যাবেন।
- এরপর টাইপ করবেন KYD <Space> 15 Digit IMEI নম্বর
- এরপর সেন্ড করবেন 16002 এই নম্বরে
SMS পাঠানোর 1 থেকে 2 মিনিটের মধ্যেই ফিরতি মেসেজে জানতে পারবেন আপনার ডিভাইসের IMEI বিটিআরসি'র ডেটাবেজে আছে কিনা।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি একটা স্ক্রীনশট দিলাম। এটা দেখে আপনারা সহজেই বুঝতে পারবেন কিভাবে মেসেজটি পাঠাবেন আর এর উত্তর কিভাবে আসে।
BTRC'র ডেটাবেজে IMEI না পাওয়া গেলে?
- আপনার মোবাইলটি যদি 2018 সালের আগে কেনা হয়ে থাকে তাহলে সেটা ডেটাবেইজে না পাওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ আমাদের সরকার তখনো এ ধরণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সেক্ষেত্রে আপনার কিছু করার প্রয়োজন নেই।
- আপনার মোবাইলটি যদি ইদানীং কেনা হয়ে থাকে এবং যদি দেখেন সেটা ডেটাবেইজে নেই তাহলে সাথে সাথে যেখান থেকে কিনেছেন সেখানে অভিযোগ করবেন। আর যারা নতুন সেট কিনবেন তারা কেনার সাথে সাথেই এই কাজটি করে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
- দেশের বাইরে থেকে যদি কেউ মোবাইল নিয়ে আসেন সেক্ষেত্রে বিমানবন্দরে থাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। এবং একজন ব্যক্তি এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুটি মোবাইল ফোন দেশে আনতে পারবেন এই পদ্ধতিতে।
আশা করি এই লেখাটি আপনাদের সবার উপকারে আসবে। এবং আরো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই মন্তবে আপনার মতামত জানাবেন। Marks PC Solution এর সাথে থাকার জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। দেখা হবে পরবর্তী লেখায় . . .
Comments
Post a Comment